মায়াবী স্বপ্নময় প্রকৃতি লোহাগাড়া
দেখে আসুন লোহাগাড়ার বন-পাহাড়:
খড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। আমাদেও প্রিয় এই মাতৃভূমির প্রকৃতি সাজিয়েছে অকৃপণভাবে। বন, পাহাড়, খাল, বিল নদী সাগর প্রকৃতির প্রায় সব উপাদানই রয়েছে দেশটিতে। ফলে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই রয়েছে পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠার অপার সম্ভাবনা।
তেমনই একটি অঞ্চল চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা। চট্টগ্রামে জেলা সদর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দক্ষিনে এর অবস্থান। আয়তন প্রায় ২৫৯ বর্গ কিলোমিটার। সারি সারি পাহাড়, বন এবং ডলু-টংকার মত ১৩ টি সৃজিত খালে সমৃদ্ধ অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত
লোহাগাড়ায় রয়েছে পর্যটন শিল্প বিকাশের অমিত সম্ভাবনা। এখন প্রয়োজন কেবল লোহাগাড়ায় স্বয়ংস্বম্পূর্ন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ। উপজেলার চুনতি, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য, পদুয়া ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস সংলগ্ন এলাকা,
বড়হাতিয়া, পুটিবিলা, কলাউজান ও পদুয়া পাহাড়ি অঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার পর্যটক লে াহাগাড়ার উপর দিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে যায়। কিন্তু স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত
লোহাগাড়ায় স্বয়ংস্বম্পূর্ন কোন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে না ওঠায় এলাকাবাসী হতাশ। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলেও সেগুলোতে সুযোগ-সুবিধার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন চুনতি গ্রাম, চুনতি অভয়ারন্য ও পদুয়া ফরেষ্ট
রেঞ্জ এলাকাকে সহজেই পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তিরিত করা যেতে পারে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় হবে।

কিভাবে যাবেন:
সড়ক পথ-চট্টগ্রাম শহরের অলংকার মোড়, গরিব উল্লাহ শাহ মাজার, নাছিরাবাদ, সিনেমা প্যালেস ও বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সৌদিয়া, এস. আলম, শ্যামলী, হানিফ পরিবহে নর বাসসহ বিভিন্ন বাসযোগে চট্টগ্রাম-
কক্সবাজার সড়কপথে লোহাগাড়ায় যাওয়া যায়। এছাড়াও মাইক্রোবাসযোগেও সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। লোহাগাড়া বটতলী পর্যন্ত বাস ভাড়া ১২০ টাকা আর মাইক্রোবাসের ভাড়া ৮০-১০০ টাকা। সময় লাগে দুঘন্টা। চট্টগ্রাম থেকে বাস অথবা
মাইক্রোবাসযোগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কস্থ চুনতি, হোটেল মিডওয়ে ইন, চুনতি ফরেষ্ট অফিসের সামনে ও চুনতি বনপুকুর এলাকায় যেতে পারেন। উপভোগ করতে পারবেন চুনতি গ্রাম ও চুনতি অভয়ারন্যেও অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য। চট্টগ্রাম শহর থেকে
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বার আউলিয়া এলাকায় নেমে পূর্বদিকে আধ কিলোমিটার দূরে গেলে আপনি পৌছে যাবেন পদুয়া ফরেষ্ট রেঞ্জ এলাকায়।

থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা: লোহাগাড়া বটতলীতে মিডনাইট, সৌদিয়া ও এম.কে. টাওয়ার, কক্সবাজার বোর্ডিংসহ অন্যান্য আবাসিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ও.আই.সি এবং চুনতি এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে হোটেল মিডওয়ে
ইন-এ ভালো খাবার পাওয়া যায়। হোটেল ও.আই.সি ও মিডওয়ে ইন এ ঢাকা ও চট্টগ্রামের এসি ও ননএসি বাসগুলো যাত্রা বিরতি করে। চুনতি গ্রাম: উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম চুনতি। এই ইউনিয়নের একটি গ্রামের নামও চুনতি। প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য্যমণ্ডিত এ অঞ্চলের বৃক্ষরাজি, পাহাড় এবং সেখানে সৃজিত বাগান, পাখির কলতান সবমিলিয়ে এটি হতে পাওে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র।

এ গ্রামটির পূর্ব-দক্ষিণে পাহাড় এবং উত্তর-পশ্চিমে এর গা ঘেষে চলে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক।
চট্ট্রগ্রাম শহর থেকে ৬৫ কি.মি দক্ষিে ন এ গ্রামের অবস্থান। চনতির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বললেন, তাদেও এই গ্রামটিতে পর্যটন কেন্দ্র হলে সরকারের প্রচুর আয় হবে।
যেভাবে যাবেন:
দুর্গাপুর আর কলমাকান্দায় যাবার বিশেষ সুবিধা হলো ঢাকার মহাখালি থেকে সরাসরি বাসে যাতায়াত। সকাল ৭টা থেকে বাস ছাড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চলে বাস।
দূর্গাপুর যেতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার। মহাখালি থেকে শাহ সুলতান বাস সার্ভিস, নেত্র পরিবহন ছাড়াও কয়েকটি বাস সার্ভিস রয়েছে। এছাড়া বিআরটিসি বাস ছাড়ে গুলিস্থান থেকে। বাস ভাড়া ২৫০ টাকা। তবে যাতায়াতের
জন্য কোন এসি বাস নেই। মাইক্রোবাসেও পরিবার নিয়ে যাওয়া যায়। ভাড়া ৫ হাজার টাকা। ঢাকা থেকে ভেঙ্গে ভেঙ্গেও যাওয়া যায়। মহাখালি থেকে মযমনসিংহ, পরে ময়মনসিংহ থেকে ব্রক্ষপুত্র সেতুর পারে দুর্গাপুরের বাস । আবার ঢাকা থেকে ট্রেনেও
যাওয়া যায়। প্রথমে ময়মনসিংহ পরে ময়মনসিংহ থেকে জারিয়া-কাঞ্জাইল রেল ষ্টেশন। সেখান থেকে বাসে বা টেম্পোতে দূর্গাপুর। দুর্গাপুরে রিকশায়ও চলাচল করতে পারবেন। কেন্দুয়া ও ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে/মাইক্রোবাসে যাওয়া আসা করা যায়। বিরিশিরি
হতে রানীখং ভাড়া করা মোটর সাইকেলে অথবা নৌকাযোগে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে মদনের মাহখালি থেকে এবং কমলাপুর থেকে বাসে যাতায়াত করা যায়। বাস ভাড়া ২৫০ টাকা।

চুনতি অভয়ারন্য;
জীব বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বনাঞ্চল
নিয়ে গঠিত চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ঘেষে বিশাল এলাকা নিয়ে এ অবস্থান। এই অভয়ারণ্যে প্রচুর হাতি, বন্য শুকর, বানর, হনুমান, মায়া হরিণ, সাম্বার, বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির পাখি
রয়েছে। ১৯৮৬ সালে ৭টি সংরক্ষিত বনভূমি নিয়ে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ইতিমধ্যে সরকারি-বেসরকারীভাবে নয়নাভিরাম পাহাড়ের ঢালে স্থাপিত হয়েছে রেষ্ট হাউজ ও ডাকবাংলো। পর্যটকদেও কাছে বিশেষ আকর্ষণ হতে পাওে অভয়ারণ্য এলাকায় পুকুর,
গর্জনের বন, গয়ালমারা প্রাকৃতিক হ্রদ, বনপুকুর ফ্রুটটেইল, জাংগালীয়া ফ্রুটট্রেইল, পর্যটন টাওয়ার, গোলঘর, ষ্টুডেন্ট ডরমেটরী, নেচার কনজারভেশন সেন্টার, গবেষণা কেন্দ্রসহ নানা কিছু। অভয়ারন্যের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা জানান
এটিকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ার জন্য ইকোট্যুরিজমের কিছু বিশেষ আকর্ষণ বিশেষ কওে পর্যটন অবকাঠামো তৈরি করা হলে এটি দেশের অন্যতম ইকোপার্কে পরিণত হবে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা আয় হবে।

পদুয়া ফরেষ্ট রেঞ্জ: উপজেলার পদুয়া ফরেষ্ট রেঞ্জ অফিসের চারদিক ঘিরে রয়েছে সারি সারি বৃক্ষরাজি। বিশাল এই এলাকাটি সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। লোহাগাড়া বন বিভাগের অধীনে ১১শ’ হেক্টও জমির মধ্যে পদুয়া ফরেষ্ট
রেঞ্জ অফিসের চারপাশে প্রায় ৩ হাজার একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এই বনাঞ্চলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বারআউলিয়া এলাকার সামান্য পূর্বদিকে উপজেলা হাসপাতালের কাছেই এর অবস্থান। বনটির জীববৈচিত্র্য
সংরক্ষনসহ ইকোপার্ক সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হলে এই এলাকাটি দেশি-বিদেশী পর্যটকদেও কাছে আরো আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। উপজেলা চেয়্যারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবূলও জানালেন সেই কথা। তিনি দু:খ করে বললেন , পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা
থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত সেখানে স্বয়ংস্বম্পূর্ন কোন পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হয়নি। উপজেলায় চুনতিসহ এমন কিছু এলাকা আছে যেগুলোকে সহজেই পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করা যেতে পারে। এতে পর্যটকের সংখ্য বৃদ্ধি পাবে, সরকারেরও কোটি কোটি টাকা আয় হবে।
|